ঢাকা,বুধবার, ৮ মে ২০২৪

দু’বছরে ১২ জনের মৃত্যু, হাতীর জন্য বিকল্প করিডোর হবে

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী ::  রোহিঙ্গা শরনার্থীর বসতির কারণে বালুখালী-ঘুমধুম করিডোর দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে হাতি চলাচলের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়েছে। তাই হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘাত বাড়ছে। ইতিমধ্যে হাতির আক্রমণে ১২ রোহিঙ্গা শরনার্থী নিহত হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংঘাত আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই হাতী চলাচলের জন্য বিকল্প করিডোর নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কমিটির একজন সদস্য সিবিএন-কে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কক্সবাজার জেলার বনভূমি এশিয়ান হাতির বাসস্থান, বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী-এই এলাকায় ৬৩ টি এশিয়ান হাতি বাস করে। এ সংখ্যা বর্তমানে আরো বাড়তে পারে। উখিয়া-টেকনাফ এবং রামু (আংশিক) উপজেলার বনভূমিতে বাস করলেও পানেরছড়া-রাজারকূল এবং বালুখালী-ঘুমধুম করিডোর দিয়ে হাতিগুলো বান্দরবান ও মিয়ানমারে নিয়মিত চলাচল করত। রামু ক্যান্টনমেন্ট স্থাপনের ফলে আগেই পানেরছড়া-রাজারকূল করিডোর বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা আসায় বাকি সাড়ে চার কিলোমিটার করিডোরও সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘর্ষ বাড়ছে। উখিয়া-টেকনাফের বনভূমিতে রোহিঙ্গারা পরিকল্পনাহীন বসতি এবং জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের ফলে হাতির আবাসস্থল প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে এবং হাতির খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে মানুষ ও হাতির সংঘর্ষ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সিএসপি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উক্ত সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন আহমদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও একই কমিটির সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম, বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এমপি, আনোয়ার হোসেন এমপি, মোজাম্মেল হোসেন এমপি, নাজিম উদ্দিন এমপি, একই মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ আমন্ত্রণে সভায় উপস্থিত ছিলেন-পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসন (প্রশাসন), পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ), কমিটির সচিব ও সরকারের উপসচিব এ.কে.এম.জি কিবরিয়া, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ।

স্থায়ী কমিটির সভায় বলা হয়, রোহিঙ্গা বসতির ফলে জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়, যা নিরূপণে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। তাছাড়া এই ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করতে হয় বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে বাস্তবায়নাধীন সিঙ্গেল পয়েন্ট মোরিং (এসপিএম) প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত সংরক্ষিত বনভূমিতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বিশেষজ্ঞ কমিটি জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব-নিকাশ করে। একই জেলায় প্রায় একই ভূ-প্রকৃতির অংশ হওয়ায় এসপিএম প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ কমিটির নির্ধারিত ক্ষয়ক্ষতির অনুরূপ হারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে ধ্বংস হওয়া ছয় হাজার একর রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনভূমিতে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। বনজদ্রব্যের ৪৫০ কোটি ও জীববৈচিত্র্যের এক হাজার ৪০৯ কোটি মিলে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। আরও সঠিক হিসাব নির্ধারণে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে ১০ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।

কিছুদিন আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শন করে আসা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন সভায় সংসদীয় কমিটিকে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কোনো কোনো স্থানে হাতির ছবি টানানো রয়েছে এবং লেখা আছে হাতির চলাচলের পথ। কিন্তু সেগুলো হয়ে গেছে রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল।

এ অবস্থায়, ক্রমাগত এ ধ্বংসযজ্ঞ আর চলতে দেওয়া যায়না। আন্তর্জাতিক মহলকে বন, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্যের এ ভয়ংকর ক্ষয়ক্ষতির কথা অবহিত করা হবে।

পাঠকের মতামত: